ঢাকা , বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ , ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

​বর্ষায় ত্রিমুখী হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৪:১২:৩৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৪-০৬-২০২৫ ০৪:১২:৩৩ অপরাহ্ন
​বর্ষায় ত্রিমুখী হুমকি ফাইল ছবি
রাজধানীসহ সারাদেশে বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) অনুষ্ঠিত একটি ‘কনটিনিউইং মেডিক্যাল এডুকেশন’ (সিএমই) সেশনে দেশের চলমান ভাইরাস জ্বরের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা ও পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান তার উপস্থাপনায় ‘রিসেন্ট ট্রেন্ড ইন ফেব্রাইল ইলনেসেস ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, দেশে এ মুহূর্তে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও কোভিড—এই তিনটি ভাইরাস একসঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বহুমাত্রিক চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা খাতে প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো ও জনসচেতনতা না বাড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

ডেঙ্গু সংক্রান্ত উপস্থাপনায় ডা. আবেদ হোসেন জানান, দেশে এই মুহূর্তে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হচ্ছে বরিশাল ও বরগুনা এলাকায়। চলতি মাসে ১৮৭৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বরিশাল ও বরগুনা জেলায়। শুধু এ সপ্তাহেই বরিশালে ৫ জন ও ঢাকায় ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। চলতি সময়ের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেন-১, ডেন-২ এবং ডেন-৩ সেরোটাইপ সক্রিয় পাওয়া গেছে। আগে এটি ঢাকা কেন্দ্রীক থাকলেও এখন সারাদেশেই ডেঙ্গুর বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া ১৬–২৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বাড়ছে, যা অতীতে তুলনামূলক কম ছিল।

চিকুনগুনিয়া প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক জানান, দেশে উপেক্ষিত ভাইরাস জ্বর ফিরছে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা নিয়ে। ২০১৭ সালের পর দেশে আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ১৯ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ২২ এপ্রিল ২০২৫ সময়কালে দেশে ৫২০ জন সন্দেহভাজন রোগীর মধ্যে ১৬১ জন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে মৃত্যুর হার কম হলেও, রোগের পরে গিটে ব্যথা, র‌্যাশ, দুর্বলতা—এমন উপসর্গ দীর্ঘমেয়াদে রোগীর জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেকারণে চিকিৎসকরা এটিকে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে ডা. আবেদ হোসেন বলেন, ২০২০ সালের মহামারি হিসেবে পরিচিত কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। বরং তা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নতুন রূপে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সম্প্রতি ওমিক্রনের জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্ট দুটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব মনিটরিং’ তালিকায় থাকলেও ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন নয়। এ বছর দেশে ১৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মধ্যে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন।এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, যারা তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা তীব্র কোভিডের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টে সাধারণ ফ্লু ও কোভিড একসঙ্গে সংক্রমিত হচ্ছে, যা বর্তমানে ‘ফ্লুরোনা’ নামে পরিচিত। এতে করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, যেমন—ডায়াবেটিস, স্থুলতা, ক্যান্সার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত—তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, চিকিৎসক, রেডিডেন্টরা।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ